বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম ২০২৪: সাধারণত ব্যক্তিগত সুবিধার্থে লেনদেন এবং অন্যান্য সকল বিষয়গুলো পরিচালনার জন্য আমরা বিকাশ একাউন্ট ব্যবহার করি। ঠিক তেমনিভাবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের তাদের বিভিন্ন লেনদেন এবং পেমেন্টগুলো সম্পাদনে সুবিধা পেতে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট ব্যবহার করা অনেক জরুরী। বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম প্রকাশিত করেছে। আমি আপনাদের সঙ্গে আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করব বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম ২০২৪ সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য। আপনিও যদি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলা খুবই জরুরী। আপনি আপনার ব্যবসার ছোট এবং বড় সকল লেনদেন খুবই সহজে করতে পারেন। বলুন তাহলে বিস্তারিত জেনে নিবেন এবং খুলে নিবেন আপনার মোবাইলের মাধ্যমেই একটি বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট কি
বিকাশ মার্জেন্ট একাউন্ট হলো এমন একটি অ্যাকাউন্ট যার মাধ্যমে খুবই সহজে গ্রাহকের পেমেন্ট রিসিভ করা যায়। অর্থাৎ গ্রাহকরা যখন বিকাশ অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে বিকাশ পেমেন্ট অপশনে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টের নম্বর দিবে তখন খুবই সহজে সেই মার্চেন্ট একাউন্টের মালিক তার পেমেন্ট রিসিভ করবে। এই সুব্যবস্থাটি তৈরি করা হয়েছিল ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের এবং অনলাইন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম গুলোর পেমেন্ট সম্পাদনের জন্য।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রায় হাজার হাজার অনলাইন ই-কমার্স ওয়েবসাইট এবং অসংখ্য দোকানপাট তাদের পেমেন্টগুলো অনলাইনের মাধ্যমে নিতে বিকাশ মার্জেন্ট একাউন্ট ব্যবহার করে। মার্চেন্ট একাউন্ট পেতে হলে অবশ্যই বিকাশ মার্জেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম জেনে সঠিকভাবে এপ্লাই করতে হবে। এরপরে করলেই একজন ব্যক্তি বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট ব্যবহার করার সুবিধা পাবে।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম ২০২৪
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে চাইলে সবার আগে এই লিংকে যেতে হবে: (
bkash.com/business/merchant)। এরপরে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে সহজেই বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খুরতে পারবেন।
১ম ধাপ: সবার আগে আপনাকে পূরণ করতে হবে মার্চেন্ট সাইন আপ ফর্মটি সঠিকভাবে নিয়ম মেনে।
বিকাশ মার্চেন্ট সাইন আপ ফরম পূরণ
বিকাশ মার্চেন্ট সাইন আপ ফরম পূরণ করতে হলে অবশ্যই পূর্বেই আপনার বেশ কিছু তথ্য যোগাড় করে রাখতে হবে। যে তথ্যগুলো পূরণ করতে হবে:
- দোকানের নাম
- জেলা
- থানা
- মোবাইল নম্বর (অবশ্যই অ্যাক্টিভ নাম্বার দিবেন)
- ই-মেইল অ্যাড্রেস (অবশ্যই ই-মেইল অ্যাড্রেস দিবেন)
- নিচের ছবিটি লক্ষ করুন। সেখানে আপনার ব্যবসার তথ্যগুলো দিন।
২য় ধাপ: সঠিকভাবে পূরণ করার পরে আপনার সামনে নিজের ছবিতে দেওয়ার মতো একটি ইন্টারফেস আসবে। আপনি যদি সকল তথ্য ঠিক ভাবে পূরণ করে থাকেন তাহলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আপনাকে বিকাশ থেকে কল দেওয়া হবে। এরপরে সকল কিছু হালনাগাদ করার পরে আপনাকে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টের অ্যাক্সেস দিয়ে দেওয়া হবে। তারপর থেকে খুবই সহজে আপনি বিকাশ মার্চেন্ট এপ্লিকেশন ব্যবহার করে সকল ধরনের পেমেন্ট লেনদেন এবং সকল সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন একজন ব্যবসায়ী হিসেবে।
বিকাশ সম্পর্কিত আরো আর্টিকেলগুলি পড়ুন:
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে কি কি লাগবে
যেহেতু বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টে একমাত্র ব্যবসায়ীরাই চাইলে ব্যবহার করতে পারে তার জন্য অবশ্যই আপনার বেশ কিছু ডকুমেন্টের প্রয়োজন হবে। এই সকল ডকমেন্টগুলো না থাকলে বিকাশ কোম্পানি আপনাকে কখনোই মার্জিন একাউন্ট প্রদান করবে না। আপনার যে সকল ডকমেন্ট গুলো লাগবে তা আমরা নিচে উল্লেখ করেছি।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে যা যা লাগবে:
- একটি দোকান এর সকল তথ্য।
- এনআইডি কার্ড।
- ট্রেড লাইসেন্স।
উপরে উল্লেখিত ডকুমেন্টগুলো থাকলে খুবই সহজে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টের জন্য আপনি এপ্লাই করতে পারেন। একাউন্টের জন্য এপ্লাই করার ২৪ ঘন্টার মধ্যে সহজেই আপনি বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টে এক্সেস পেয়ে যাবেন। তার জন্য অবশ্যই আপনার তথ্যগুলো হালনাগাদ করা হবে তাই চেষ্টা করুন সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করার। এবং আপনার বর্তমানে ব্যবসা লোকেশন টি সঠিকভাবে ফিলাপ করুন যাতে করে আপনার ব্যবসার লোকেশনটি তারা জানতে পারে। এই সকল তথ্যগুলো ঠিকঠাক থাকলে এবং ডকুমেন্টগুলো সঠিকভাবে ফিলাপ করলে আপনি সহজে মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট পেয়ে যাবেন।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে
✅ সব তথ্য যেন জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়
✅ বিজনেস পেইজের নাম এবং রেজিস্ট্রেশনের সময় দেওয়া ব্যবসার নাম এক হতে হবে
✅ জাতীয় পরিচয়পত্রের পরিষ্কার ছবি তুলুন
✅ লাইভ ছবি তোলার সময় চোখ খোলা রাখুন এবং ভালো পোশাক পরুন। নিশ্চিত করুন যেন আবেদনকারী ছাড়া অন্য কেউ ছবিতে না থাকে
✅ বিজনেস পেইজ বা গ্রুপের সঠিক লিংক দিন
✅ সিম মালিকানার স্ক্রিনশট যেন স্পষ্ট ও পরিষ্কার হয়
❌ ছবি থেকে ছবি তুলবেন না
❌ ব্যক্তিগত প্রোফাইলের লিংক প্রদান করবেন না
❌ অপ্রসঙ্গিক পোশাক পরিহিত অবস্থায়, চোখ বন্ধ করে বা অন্ধকারে লাইভ ছবি তুলবেন না
❌ দোকানের ছবির জন্য ডাউনলোড করা ছবি ব্যবহার করবেন না
❌ জাতীয় পরিচয়পত্রের কোন অংশ পরিবর্তন করবেন না
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট এর সুবিধা অসুবিধা
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট এর সুবিধা | বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট এর অসুবিধা |
---|
দ্রুত ও সহজেই বিকাশ মার্চেন্ট ব্যবহারে গ্রাহকের পেমেন্ট রিসিভি করা যায়। | তবে প্রতিটি লেনদেন করার জন্য বিকাশ কেটে নেয় নির্ষ্টি ফি। |
বিকাশ অ্যাকউন্ট এর তুলনায় মার্চেন্ট একাউন্ট ব্যবহারে বেশি সুবিধা পাওয়া যায় | অসুবিধা নেই |
২৪/৭ সুবিধা ও সাপোর্ট | অসুবিধা নেই |
১০০% নিরাপত্তা | অসুবিধা নেই |
সহজেই ব্যবহার যোগ্য অ্যাপ। | তবে অনেকেই অ্রাপ ব্যবহার করতে পারেনা। |
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট ক্যাশ আউট চার্জ
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট ক্যাশ আউট চার্জ ১.৮৫%। প্রথমত ৫০,০০০ টাকা অবধি ১.৪৯% এবং ৫০,০০০ টাকা পার হলে ১.৮৫% ক্যাশ আউট চার্জ প্রদান করতে হবে। সাধারণত যারা বড় ব্যবসায়ী তাদের নিয়মিতভাবেই ৫০,০০০ টাকার বেশি লেনদেন হয়ে থাকে। সেই ক্ষেত্রে ক্যাশ আউট চার্জ নির্ভর করবে ক্যাশ আউট এর উপর। অর্থাৎ আপনি যদি দিনে ৫০ লক্ষ টাকা ও লেনদেন করেন কোন সমস্যা নেই কিন্তু যদি আপনি ক্যাশ আউট করতে যান সেই ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকার উপরে লেনদেন করলে আপনাকে ১.৮৫% ক্যাশ আউট চার্জ দিতে হবে।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট লিমিট
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট লিমিট দৈনিক সেন্ড মানিতে লিমিটেশন রয়েছে। বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট থেকে মার্চেন্ট টু মার্চেন্ট সেন্ড মানিতে সর্বোচ্চ তিরিশ হাজার টাকা প্রতিটি লেনদেনে পাঠানো যাবে। এবং প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা মার্চেন্ট টু মার্চেন্ট সেন্ড মানি করা যাবে। মার্চেন্ট একাউন্ট থেকে গ্রাহকের একাউন্টে একটি লেনদেনে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা প্রতিদিন একটি গ্রাহকের একাউন্টে দেওয়া যাবে।
মার্জেন্ট একাউন্ট এর ধরন অনুযায়ী মূলত সেন্ড মানি এই লিমিটেশনটি আলাদা হতে পারে। সাধারণত ব্যবসায়িক মার্চেন্ট একাউন্ট এবং পার্সোনাল মার্চেন্ট একাউন্ট আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। যাদের ব্যবসা অনেকটাই বড় তারা মূলত বড় ধরনের মার্চেন্ট একাউন্ট, বা বড় ব্যবসা একাউন্ট পরিচালনা করবে। সেই ক্ষেত্রে সেই একাউন্টে নিয়মিতভাবে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লেনদেন করা যাবে।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট সেন্ড মানি চার্জ
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট সেন্ড মানি চার্জ দুই ধরনের হয়ে থাকে। মার্চেন্ট টু মার্চেন্ট সেন্ড মানি করতে 0.20% চার্জ প্রদান করতে হবে। তবে যদি মার্চেন্ট টু গ্রাহক একাউন্টে আপনি টাকা প্রদান করতে চান সে ক্ষেত্রে ৫ টাকা প্রতিটি লেনদেনে নিয়মিতভাবে প্রদান করতে হবে। অর্থাৎ সর্বোচ্চ লেনদেন পর্যন্ত যদি করতে চান সে ক্ষেত্রেও মাত্র ৫ টাকায় চার্জ প্রদান করতে হবে।
আশা করছি আমাদের আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনি বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম জেনে গেছেন। তাই আপনারা যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রয়েছেন। সকল নিয়ম গুলো অনুসরণ করবেন যাতে সহজেই সবকিছু পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে বিকাশ আপনাকে সহজেই একটি মার্চেন্ট একাউন্ট দিয়ে দেয়।
আমাদের শেষ কথা
এন বাংলা ব্লগের এই আর্টিকেলে আপনাদের সাথে আমরা
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম ২০২৪ সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানানোর চেষ্টা করেছি। তাই আশা করছি প্রিয় ব্যবসায়ী ভাইয়েরা নিজেদের ব্যবসায়ীক দেনদেনের সুবিধাজনক মাধ্যম হিসেবে সহজেই বিকাশ মার্চেন্টকে বেচে নিতে পারবেন। এ ধরনের বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং রিলেটেট তথ্যের আপডেট পেতে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটি ভিজিট করুন।